বিপাকে সাগরের জেলারা
খাল বিলীন হওয়ায় ট্রলার ভিড়ানোর জায়গা সংকট
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৯-০২-২০২৫ ০৫:১৯:৪০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৯-০২-২০২৫ ০৫:১৯:৪০ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
ভোলার চরফ্যাশনের দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর। পলি জমে গড়ে উঠা এ চর বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। বেশি মানুষের বসবাস না হলেও ইলিশ মৌসুমে এ চর হয়ে উঠে লোকারণ্য। ইলিশ মৌসুমে ঢালচরে পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রলার জড়ো হয়। থাকেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ। পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার ট্রলারগুলো ভিড় করে এ চরে। তবে নদী ভাঙন ও পলি মাটি পড়ে বিলীন হয়ে গেছে ঢালচরের খালগুলো। এতে করে বিপাকে জেলেরা। ট্রলার কোথায় ভিড়াবে সেই চিন্তায় তারা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরে হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঢালচর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত চরের বাসিন্দাদের জীবন। ঘূর্ণিঝড়ের একের পর এক আঘাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না তারা। লড়াই করে কোনোরকম করে বেঁচে আছে তারা। ধংসপ্রাপ্ত জীবন নাকি ইলিশ মৌসুমের প্রস্তুতি, কোনটা ঠিক করবে তারা।
ঢালচরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পরির খাল, ঢালচর খাল, টাওয়ার বাজার খাল, আমিন মিয়ার খাল অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। ভাঙনে খালগুলো অধিকাংশ অংশ নদীতে মিশে গেছে। পাশাপাশি পলি পড়ে খালের গভীরতা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা।
ঢালচরের বাসিন্দা নুরুদ্দিন মাঝি বলেন, অনেকবার ঘাট বদল করেছি। এখন আর এখানে ঘাট করার কোন জায়গা নেই।’ নুরুদ্দিনের সুরে একই কথা বললেন ঢালচরের তৈয়ব আলী মাঝি, সাহাবুদ্দিন মাঝিসহ আরও অনেকে। সবারই যেন এক সংকট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষার তিন মাসে এখান থেকে আহোরিত হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ইলিশ। মৌসুমে অন্তত পাঁচ হাজার ট্রলারের ভিড় জমে এখানে। সঙ্গে থাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার জেলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ধরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসার জন্য এখানে বহু মানুষ আসে। ইলিশ বেচাকেনা ছাড়াও সমুদ্রে মাছ ধরারত অন্যান্য এলাকার ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়লে আশ্রয়স্থল হিসেবে ঢালচরেই আসেন।
ঢালচরের প্রায় ৬০ বছরের পুরানো ইলিশ ব্যবসা এবার চরম সংকটের মুখে পরবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘাট উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়াও হয়নি। অথচ ইলিশ মৌসুমের অপেক্ষায় আছে হাজার হাজার ব্যবসায়ী, জেলে এবং তাদের পরিবার।স্থানীয়রা জানান, খালের অভাবে গত বছর নদী ও সাগরে নৌকা বেধেছিল অনেকে। তরে রাতের তীব্র স্রোতে জেলেসহ ভেসে যায় অনেক নৌকা।
এ বিষয়ে ঢালচরের চেয়ারম্যান আবদুস সালাস হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙনের ফলে চরের অর্ধেকের বেশি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খালগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে। খাল না থাকায় জেলেদের দুর্যোগকালীন সময়ে কোথায়ও আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে জীবন ও ট্রলারহানীর শঙ্কা।’
খাল খননের দাবি জানিয়ে সাহাবুদ্দীন মাঝি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। মাছ ধরে পেট চালাই। এখানে একটা খাল করি দিলে আমাদের বড় সমস্যা শেষ হয়ে যেত। সরকারের কাছে আমাদের আর কোনো চাওয়া নাই।’ মৎস্য ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারের নিয়মনীতি অনুসরণ করে ব্যবসা করি। সরকার যদি একটা খাল খননের মাধ্যমে আমাদের প্রতি সুনজর দেন তাহলে আগামীতে আমরা প্রচুর ইলিশ রপ্তানি করতে পারব।’
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স